
পিপলআইস রিপোর্ট: শত বছর ধরে দেশজুড়ে মানুষের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে লাচ্ছা সেমাই। সারা দেশেই রয়েছে বগুড়ার লাচ্ছা সেমাইয়ের কদর। ব্যবসায়ীদের কল্যাণে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশেও যাচ্ছে এই সেমাই। জানা গেছে, ত্রিশ ও চল্লিশের দশকে কলকাতা ও হুগলি থেকে এনে বিক্রি করা হতো। ষাটের দশকে বগুড়ার চিকন ও লাচ্ছা সেমাইয়ের সুনাম দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। শত বছরের ঐতিহ্যবাহী আকবরিয়া হোটেলের প্রতিষ্ঠাতা মরহুম আকবর আলী ব্রিটিশ আমলে বগুড়া শহরে প্রথম লাচ্ছা সেমাই তৈরি করেন। এরপর ধীরে ধীরে দেশের চাহিদাকে কেন্দ্র করে জেলায় গড়ে উঠে কারখানা। বিশেষ পদ্ধতিতে ময়দা প্রক্রিয়াজাত করে সয়াবিন, ডালডা ও ঘিয়ে ভাজা হয় সেমাই। এরপর প্যাকেট করে তা বাজারে বিক্রির জন্য পাঠানো হয়। সময়ের পরিবর্তনের সাথে সাথে পাল্টে যাচ্ছে সভ্যতার যুগ। পাল্টে যাচ্ছে জীবন ব্যবস্থা। মানুষ সামাজিক জীব, মানুষের কল্যাণেই সমাজ। দ‚র অতীতকে জীবন্ত করে বর্তমানকে ভুলিয়ে দিতে চায় স্মৃতি। মনের বিচিত্র রং দিয়ে গড়ে উঠেছে ছোটবেলার স্মৃতি ঈদ উৎসব। সন্ধ্যা মেঘের রক্তিমার মতো সব মুছে গেলেও ঈদের দিনে আদর, স্নেহ ও ভালোবাসার সাথে যুক্ত হতো নতুন নতুন জামা কাপড় ও লাচ্ছা সেমাই। লাচ্ছা সেমাই সুস্বাদু এবং বহুমুখী মিষ্টান্ন যা প্রাতরাশ, মধ্যাহ্নভোজ বা রাতের খাবারের জন্য পরিবেশন করা যেতে পারে। এটি ঈদ, বিয়ের মতো যে কোনো বিশেষ অনুষ্ঠানে একটি জনপ্রিয় মিষ্টান্ন। আমাদের অধিকাংশের শৈশব কেটেছে গাঁয়ে। একটা সময় ঈদ উৎসবে হাতে তৈরি নানা ধরনের সেমাইয়ের প্রচলন ছিল। ঈদ উৎসব পালনে সেগুলো বিলুপ্তির পথে। হাতের স্পর্শ ব্যতীত প্রযুক্তিনির্ভর আকবরিয়ার লাচ্ছা সেমাই মানুষের ঈদ উৎসবকে আরো প্রাণবন্ত করে তুলেছে। বিশেষ করে শুধুমাত্র ঈদ উৎসব নয়, অতিথি আপ্যায়ন, সামাজিক ও ধর্মীয় উৎসবে লাচ্ছা সেমাইয়ের কদর বেড়েছে বহুগুণ। সেমাই আদিকাল হতে গ্রাম্য কৃষ্টিকালচারের একটা অংশ। মিশে আছে গ্রামের সকল মানুষের শৈশব স্মৃতিতে। বগুড়ার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ঈদের আনন্দের সঙ্গে এখন মিশে গেছে লাচ্ছা সেমাই। বগুড়ার এই সেমাই ছাড়া যেন ঈদের আনন্দ পরিপ‚র্ণ হয় না। তাই অতিথি অ্যাপায়নসহ স্বজনদের বাড়িতে সেমাই উপহার হিসেবে পাঠানো হয়। আকবরিয়া লিমিটেড এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসেন আলী দুলাল জানান, আমরা স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে সেমাই তৈরি করে থাকি, জেলার চাহিদা মিটিয়ে সারা দেশে এবং দেশের বাহিরেও যাচ্ছে বগুড়ার সেমাই। আকবরিয়া লিমিটেড এর চেয়ারম্যান হাসান আলী আলাল বলেন, উত্তর জনপদে আমার বাবা মরহুম আকবর আলী মিঞা প্রথম লাচ্ছা সেমাই তৈরি করেছেন, তাই গুণগতমানে ভোক্তার সন্তুষ্টি, ঐতিহ্য ও জনগণের ব্যাপক সাড়াতে বরাবরই প্রথম থাকতে চাই। ঈদের শ্রেষ্ঠ আনন্দ আকবরিয়া লাচ্ছা সেমাই। রসনার ভিন্ন ভিন্ন স্বাদের কথা চিন্তা করে ও ক্রয় ক্ষমতার সামর্থ্য অনুযায়ী কয়েক ধরনের লাচ্ছা সেমাই তৈরি করছি আমরা। বগুড়া চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি এর ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইরুল ইসলাম জানান, বগুড়ার সেমাইয়ের দেশজুড়ে বৃহৎ বাজার রয়েছে। আমাদের বিসিকেও সেমাইয়ের কয়েকটি কারখানা আছে। এখানকার সেমাই উত্তরবঙ্গ ছাড়াও ঢাকা ও বিভিন্ন জেলায় যায়। সেমাই শিল্পে উদ্যোক্তা যেভাবে তৈরি হচ্ছে এবং এখানে যেমন দক্ষ কারিগর আছে তাতে একটা সময় এটা দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাইরেও রপ্তানি হবে।
Leave a Reply