Press ESC to close

  • ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  • ১৪ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৩ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
  • রাত ১১:৪০ | শুক্রবার | বসন্তকাল
PeopleEyes24.comPeopleEyes24.com

জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছে ১১৬ বছর ধরে সান্তাহার মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয়

পিপলআইস রিপোর্ট: বগুড়ার আদমদীঘি উপজেলার ঐতিহ্যবাহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান সান্তাহার মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয় দীর্ঘ ১১৬ বছর ধরে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে আসছে। ১৯০৯ সালে প্রতিষ্ঠিত এই প্রতিষ্ঠানটি ‘চার্চেস অব গড মিশনের শিক্ষা প্রকল্প’-এর আওতায় গড়ে ওঠে। শুরু থেকেই এই প্রতিষ্ঠানটি ধর্ম-বর্ণের ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে শিক্ষার আলো প্রদান করে আসছে। বর্তমানে এটি একটি সমন্বিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে, যেখানে মুসলিম, হিন্দু, খ্রিস্টানসহ সব ধর্মের শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে পড়াশোনা করছে। সান্তাহার পৌর শহরের রথবাড়ি এলাকায় অবস্থিত এই বিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয় পশ্চিম পাশের একটি টিন সেডের শ্রেণিকক্ষে। পরবর্তীতে ২০১০ সালে পূর্ব পাশে আরেকটি টিন সেড ভবন নির্মিত হয়। বিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের পাশে ১৯৮৫ সালে খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের জন্য একটি উপাসনালয় গড়ে তোলা হয়। বর্তমানে এই স্কুলে নার্সারি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ১৭৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে ৮৪ জন ছাত্র এবং ৯২ জন ছাত্রী। শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম, এরপর হিন্দু এবং খ্রিস্টান ধর্মের শিক্ষার্থীরা রয়েছে। প্রতিদিনের অ্যাসেম্বলিতে শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ ধর্ম অনুসারে কোরআন তেলাওয়াত, গীতাপাঠ এবং প্রার্থনা করে দিন শুরু করে। এটি একটি অন্যতম উদাহরণ, যেখানে ধর্মীয় সম্প্রীতির চর্চা হয় প্রতিনিয়ত। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পাঠ্যপুস্তকের পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে আসছে। বিদ্যালয়ের লক্ষ্য শুধু পরীক্ষার ফলাফল ভালো করা নয়, বরং শিক্ষার্থীদের সৎ, আদর্শবান এবং দায়িত্বশীল নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। এখানকার শিক্ষার্থীরা জাতীয় পর্যায়ে ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে এবং আদর্শ মানুষ হিসেবে গড়ে উঠছে। বর্তমানে ৭ জন শিক্ষক এই বিদ্যালয়ে কর্মরত, যাদের মধ্যে ৩ জন পুরুষ এবং ৪ জন নারী। তাঁরা শিক্ষার্থীদের যত্নসহকারে পাঠদান দিয়ে থাকেন। স্কুলটি শিক্ষার্থীদের ব্যক্তিগত ও একাডেমিক উন্নয়নে প্রতিনিয়ত কাজ করে চলেছে। দীর্ঘপথ পরিক্রমায় অসংখ্য মেধাবী শিক্ষার্থী তৈরি করেছে, যারা আজ দেশের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছে। শেখ মোহাম্মদ সেলিম নামে এক প্রাক্তন শিক্ষার্থী স্মৃতিচারণ করে বলেন, আমার চার প্রজন্ম-দাদা, বাবা, আমি এবং আমার মেয়ে-এই স্কুলের শিক্ষার্থী। একসময় এই স্কুলটি এলাকায় সেরা ছিলো। যদিও কালের বিবর্তনে বিভিন্ন কারণের জন্য শিক্ষার্থী সংখ্যা কিছুটা কমে গেছে, তবে শিক্ষার মান এখনও ভালো রয়েছে। অন্যদিকে সান্তাহার পুরাতন বাজার এলাকার বাসিন্দা জহুরুল ইসলাম জানান, তার সন্তান আল জোয়ানুর বর্তমানে এই বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, স্কুলটির পাঠ পরিকল্পনা ভালো এবং নিয়মিত ক্লাস হয়। এখানকার শিক্ষার্থীরা ভালো ফলাফল অর্জন করে, যা আমাদের জন্য গর্বের।

কালের বিবর্তনে সান্তাহার এলাকায় বেশ কিছু কিন্ডারগার্টেন ও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গড়ে ওঠায় এবং রেলগেটের যানজটের কারণে বিদ্যালয়টির শিক্ষার্থী সংখ্যা কিছুটা হ্রাস পেয়েছে। তবে শিক্ষার মান ও নৈতিক শিক্ষাদানের ধারা অব্যাহত রয়েছে। বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক জানান, একসময় বিদ্যালয়ে দূর-দূরান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা আসতো। তাদের আনা-নেওয়ার জন্য ৬টি স্কুল ভ্যান ছিলো। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতি বছরই বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার সুযোগ থাকে। এখানকার পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পরীক্ষায় নিয়মিত ভালো ফলাফল বয়ে আনে।

বগুড়া চার্চেস অব গড মিশনের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ডোনাল্ড দাস বলেন, সান্তাহার মিশন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঐতিহ্য শুধু সান্তাহার নয়, পুরো দেশের গর্ব। শিক্ষার মান উন্নত রাখার পাশাপাশি বিদ্যালয়টি আরও আধুনিকায়নের পরিকল্পনা ইতিমধ্যে নেয়া হয়েছে। নতুন ভবন নির্মাণ, প্রযুক্তিনির্ভর শিক্ষা কার্যক্রম এবং শিক্ষার্থীদের জন্য নৈতিক শিক্ষার আরও উন্নত পদ্ধতি চালু করার পরিকল্পনা রয়েছে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে একতা, সম্প্রীতি ও মানবিকতার যে চর্চা হয়, তা দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের জন্য দৃষ্টান্তমূলক। এটি শুধু একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় নয়, বরং একটি ঐতিহাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে যাচ্ছে। এটি শিক্ষার আলো জ্বালানোর একটি দীপশিখা। শত বছরের বেশি সময় ধরে এই বিদ্যালয়টি শিক্ষার্থীদের মননশীলতা, নৈতিকতা এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার কাজ করছে। আজও এই বিদ্যালয়ের ঐতিহ্য অক্ষুণ্ণ রয়েছে এবং তা আগামী দিনেও প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চলমান থাকবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *