
পিপলআইস রিপোর্ট: ইট-কাঠ-পাথরের দেয়াল শুধু ভবনের কাঠামো নয়, কখনো কখনো তা হয়ে ওঠে ইতিহাসের ধারক, সৃষ্টির ক্যানভাস। ঠিক এমনই এক ব্যতিক্রমী প্রয়াস নিয়েছে বগুড়া ওয়াইএমসিএ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ। বিদ্যালয়ের দেয়ালে গৌরবময় ইতিহাস ও কার্যক্রমের বর্ণাঢ্য চিত্র। বগুড়া শহরের ঐঐতিহ্যবাহী ওয়াইএমসিএ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান শিক্ষার গন্ডি পেরিয়ে ইতিহাস ও কার্যক্রম তুলে ধরার জন্য গ্রহণ করেছে এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। দেয়ালে চিত্রকর্মের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে এর প্রতিষ্ঠাকালীন ইতিহাস, উল্লেখযোগ্য কার্যক্রম এবং শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সাফল্যের গল্প। বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে মূল ভবনের দেয়ালে আকর্ষণীয় চিত্রকর্মে ফুটে উঠেছে শিক্ষার গুরুত্ব, নৈতিক শিক্ষা, সামাজিক উন্নয়নমূলক কার্যক্রম এবং দীর্ঘ ইতিহাসকে চিত্রকর্মের মাধ্যমে জীবন্ত করে তোলা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের সভাপতি মিস অর্পনা প্রামানিক বলেন, শিক্ষাঙ্গন একটি পবিত্র স্থান। শিক্ষার এ পাদপিঠে আমাদের ভবিষ্যৎ নাগরিকরা তাদের জীবনকে গড়ে তোলে। শক্ত ভিত যেমন একটি অট্টালিকাকে করে তোলে মজবুত ও টেকসই। ঠিক তেমনই শিক্ষাঙ্গনের স্বশিক্ষাই একটি শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ নাগরিক জীবনকে সার্থক ও সফল করে গড়ে তোলে। ছাত্র সমাজ দুর্বার প্রাণশক্তির প্রতীক। তারা দেশের ভবিষ্যৎ নাগরিক। তাই তারা মহৎ গুণের অধিকারী হবে এটাই প্রত্যাশিত।
তাদের সততা আদর্শবাদিতা ন্যায় নিষ্ঠা, উদ্যম, দেশপ্রেম ইত্যাদি বহুবিধ গুণাবলীর অধিকারী হতে হবে। একটি জাতির সমৃদ্ধি সম্মান আর মর্যাদার সঙ্গে ছাত্র সমাজই সম্পৃক্ত। জাতির গৌরব বৃদ্ধির সুমহান দায়িত্ব একদিন তাদের ওপর বর্তাবে।
প্রতিষ্ঠানের নির্বাহী পরিচালক অধ্যক্ষ রবার্ট রবিন মারান্ডী বলেন, ভালোবাসার আবেগময় প্রকাশই হচ্ছে দেশপ্রেম। যে দেশপ্রেম বীজ বপন করে শিক্ষাঙ্গন হতে। শিক্ষাঙ্গনে দেয়ালে নানা ধরণের লেখনিতে দেশপ্রেমে শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করে তোলে। ডাগর নবীন চোখগুলো বিশ্বগ্রাসী হওয়ার ফলে হৃদয়ে আত্মস্থ করে তোলে ভালো কাজের দৃষ্টান্তগুলো। বগুড়া ওয়াইএমসিএ’র দেয়ালে সুরক্ষিত কার্যক্রমগুলো দেশপ্রেমে এগিয়ে নিতে শিক্ষার্থীদের প্রেরণা যোগাবে। প্রতিষ্ঠানের উপদেষ্টা এ্যাড, বার্নাড তমাল মন্ডল বলেন, শিক্ষার্থীদের শুধু পাঠ্যবইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে চলবে না। তাদের ইতিহাস জানাতে হবে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা নিজেদের বিদ্যালয়ের অতীত এবং মূল্যবোধ সম্পর্কে জানতে পারবে। অভিভাবকরাও এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন। তারা মনে করেন, শিশুরা যখন প্রতিদিন এই দেয়ালচিত্র দেখবে, তখন তাদের মধ্যে বিদ্যালয়ের প্রতি ভালোবাসা এবং ইতিহাস সম্পর্কে জানার আগ্রহ বাড়বে। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানান, এই চিত্রকর্ম তাদের বিদ্যালয়ের প্রতি গর্বিত হওয়ার অনুভূতি জাগিয়েছে। চিত্রকর্মগুলো তাদের শিকড়ের সঙ্গে পরিচিত হতে সহায়তা করছে। দেয়ালের ছবিগুলো আমাদের মনে সাহস জোগায়। আমরা বুঝতে পারি, আমাদের বিদ্যালয় কেবল একটি ভবন নয়। এটি আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য আর স্বপ্নের উৎস। এই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ শুধু বিদ্যালয় প্রাঙ্গণেই নয়, স্থানীয়দের মধ্যেও দারুণ সাড়া ফেলেছে। অনেকেই বিদ্যালয় প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করতে আসছেন এবং চিত্রকর্মগুলো দেখে মুগ্ধ হচ্ছেন। বিদ্যালয়ের এই উদ্যোগ ভবিষ্যতে শিক্ষার্থীদের মাঝে সৃজনশীলতার চর্চা এবং ঐতিহ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশাবাদী সংশ্লিষ্টরা।
Leave a Reply