
পিপলআইস রিপোর্ট: বগুড়ার বিভিন্ন এলাকায় দৃষ্টিহীনদের দৃষ্টি ফেরাতে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছে গাক চক্ষু হাসপাতাল। চোখ যে মনের কথা বলে। মনের কথা বলতে হলে চোখের দৃষ্টি অত্যাবশ্যক। দৃষ্টি দান এক মহৎ উদ্যোগ। এমন উদ্যোগ গ্রহণ করেছে বগুড়ার গাক চক্ষু হাসপাতাল। এ সংস্থার নির্বাহী পরিচালক ড. খন্দকার আলমগীর হোসেন বলেন সকলের সাথে মিলেমিশে জীবন ধারণ এবং সুখে-দুখে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর মধ্যেই জীবনের যথার্থ সার্থকতা নিহিত। নিজের স্বার্থের জন্য জীবন নয়, স্ব স্ব ধর্মীয় চেতনায় মানুষকে সেবাধর্মে অনুপ্রাণিত করা উচিত। মানুষের মধ্যে তিনি শ্রেষ্ঠ যিনি মানুষের উপকার করেন। পরোপকারের মাধ্যমে যে আনন্দ লাভ করা যায় সে আনন্দই জীবনকে করে সুন্দর। সমাজে অসহায় মানুষকে প্রাণবন্ত করে তোলাই মানবের ধর্ম।
বগুড়ায় দরিদ্র তথা আপামর জনগোষ্ঠীর চক্ষু চিকিৎসায় আলো ফুটিয়েছে গাক চক্ষু হাসপাতাল। মাত্র ১০০ টাকায় নাম রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে চোখের সঠিক রোগ নির্ণয় করে চিকিৎসা প্রদান করা হচ্ছে। স্বল্প টাকায় চোখের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা নিতে দূর দূরান্ত থেকে চক্ষু রোগীগণ প্রতিনিয়ত আসছেন এ হাসপাতালে। চক্ষু রোগীদের স্বল্পমূল্যে উন্নতমানের চক্ষু চিকিৎসা নিশ্চিত করতে কাজ করছে হাসপাতালটি। অত্যাধুনিক মেশিন দ্বারা ফ্যাকো অপারেশনসহ চোখের ছানি ও অন্যান্য অপারেশনের মাধ্যমে দেশ জুড়ে সুনাম অর্জন করেছে গাক চক্ষু হাসপাতাল। এখান থেকে চক্ষু চিকিৎসা সেবা নিয়ে সুস্থ্য জীবন যাপন করছেন।
দেশের জনগণের স্বাস্থ্য সমস্যার মধ্যে চক্ষুরোগ একটি অন্যতম সমস্যা। পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রায় শতকরা ২৫জন চোখের কোনো না কোনো সমস্যায় ভুগে থাকেন এবং এর মূল কারণ অপুষ্টি, দারিদ্র, অসচেতনতা, দুর্ঘটনা, অনিয়ন্ত্রিত ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের ব্যবহার ও সময়মত চোখের চিকিৎসা গ্রহণ না করা অন্যতম। বিষয়টির উপর গুরুত্বারোপ করে দরিদ্র উপকারভোগী তথা সাধারণ জনগোষ্ঠীর অন্ধত্ব নিবারণে চক্ষু রোগের চিকিৎসার লক্ষ্যে ২০১৫ সালে বগুড়ায় একটি আধুনিকমানের গাক চক্ষু হাসপাতাল স্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে ২০২১ সালে দিনাজপুর ও ২০২২ সালে ঢাকায় চক্ষু হাসপাতাল স্থাপন করে পার্শ্ববর্তী জেলা সমূহে চক্ষু চিকিৎসা এবং সংস্থার কর্ম এলাকার প্রত্যন্ত অঞ্চলে চক্ষু ক্যাম্প আয়োজনের মাধ্যমে চক্ষু রোগীদের বিনা মূল্যে চক্ষু সেবা প্রদান করা হচ্ছে।
গাক চক্ষু হাসপাতালের ম্যানেজার মোঃ সাখাওয়াত হোসেন জানান, প্রথম ধাপে যে কোন চক্ষু রোগী ১০০ টাকায় নাম রেজিস্ট্রেশন করেন। এরপর চোখের পরীক্ষা নিরীক্ষার করে বিশেষজ্ঞ চক্ষু চিকিৎসকগণ চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র দিয়ে থাকেন। যে সমস্ত রোগীর চোখের ছানি পরিলক্ষিত হয় তাদের ছানি অপারেশনের জন্য পরামর্শ প্রদান করেন। চক্ষু রোগীর আর্থিক সক্ষমতা বিবেচনায় নিয়ে চোখের ছানির ফ্যাকো অপারেশন এবং (এসআইসিএস) এর মাধ্যমে স্বল্পমূল্যে এমনকি অতিদরিদ্র চক্ষু রোগীদের বিনামূল্যে চোখের ছানি অপারেশন করা হয়। টাকার অভাবে একটি রোগীও বিনা চিকিৎসায় এ চক্ষু হাসপাতাল থেকে ফেরত দেয়া হয় না।
গাক চক্ষু হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা শাজাহানপুর উপজেলার ডোমনপুকুর গ্রামের ৮০ বছরের মনোয়ারা বেগম জানান, তিনি তার চোখের ছানি অপারেশন করিয়েছেন। ১০০ টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করার পর চিকিৎসকরা তাকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে ছানি অপরাশেন করার পরামর্শ দেন। তার আর্থিক অবস্থা ভাল না থাকায় ইউনিয়র পরিষদের চেয়ারম্যানের সুপারিশ নিয়ে বিনামুল্যে ছানি অপারেশন করান। তিনি বলেন এখন চোখের স্বচ্ছ দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেয়ে অন্যের উপর নির্ভর না করে একাই চলা ফেরা করতে পারছেন।
গাক এর উপ-পরিচালক (পিএসটুইডি) মোঃ আরমান হোসেন জানান, গাক চক্ষু হাসপাতাল প্রতি মাসে চক্ষু চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে বিভিন্ন অঞ্চলে ফ্রি চক্ষু ক্যাম্পের আয়োজন করা হয় এবং বিনা মূল্যে চিকিৎসা প্রদান করা হয়। এছাড়াও উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় এ ধরণের ক্যাম্প আয়োজন করে বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৫ লাখ চক্ষু রোগীকে স্বল্পমূল্যে/বিনামূল্যে চক্ষু চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হয়েছে।
গ্রাম উন্নয়ন কর্ম (গাক) এর প্রতিষ্ঠাতা ও নির্বাহী পরিচালক ড. খন্দকার আলমগীর হোসেন জানান, এরই আলোকে অতিদরিদ্র ও দরিদ্র সদস্য পরিবারসহ কর্ম এলাকায় বসবাসরত জনগোষ্ঠীর মাঝে নানা ধরনের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে চোখের সমস্যা একটি অন্যতম সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে ২০১৫ সালে গাক চক্ষু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হয়। পরবর্তীতে দিনাজপুর ও ঢাকাতে পৃথক দুটি চক্ষু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করা হলেও পর্যায়ক্রমে দেশের সকল বিভাগীয় শহরে হাসপাতাল সম্প্রসারণের লক্ষ্যে নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে সংস্থাটি। গাক চক্ষু হাসপাতাল চক্ষু শিবিরে অসহায় ও গবীর চক্ষু রোগীর চোখ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে চিকিৎসা সেবা দেয়া এবং সেই সাথে চক্ষু শিবিরে রোগীদের প্রয়োজনীয় ওষুধপত্র ও চশমা প্রদান করে থাকে। সঠিক সময়ে চোখের চিকিৎসা না করা এবং সচেতনতার অভাবে যারা ধীরে ধীরে অন্ধত্বের দিকে যাচ্ছেন তাদের অস্বচ্ছলতা অনুধাবন করে স্বল্প/বিনামূল্যে চিকিৎসার জন্য এ চক্ষু হাসপাতালটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। দৃষ্টি সবার অধিকার এ বিষয়টিকে সামনে রেখে গাক চক্ষু হাসপাতাল কাজ করতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
Leave a Reply