
পিপলআইস রিপোর্ট: শীতকালের সঙ্গে জড়িয়ে আছে খেজুরের রস। শীতের সকালে কাঁপতে কাঁপতে খেজুরের রস পান করে অনেকেই। খেজুর রস দিয়ে বানানো গুড়-পাটালির পিঠা-পায়েস। দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা বগুড়ায় জেঁকে বসতে শুরু করেছে শীত। জানা যায়, আবহমান কাল থেকেই গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে শীতের আমেজের সঙ্গে মিশে আছে খেজুরের রস। জেলার বিভিন্ন এলাকায় খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করতে ব্যস্ত সময় পার করছে রস বিক্রেতারা। বগুড়া জেলার আদমদিঘী এলাকার কালাম প্রতি বছরের মতো এবারও সকাল বেলা ট্রেনে করে বগুড়া শহরে রস বিক্রি করে থাকে। দেড় মণ রস প্রতি কেজি গাছিদের কাছ থেকে পাইকারি দরে ৩০ টাকা করে ক্রয় করে বগুড়া শহরে ৬০ টাকা দরে বিক্রি থাকে। খরচ বাদে প্রতিদিন হাজার টাকার উপরে উপার্জন করে থাকে। স্ত্রী তিন ছেলে এক মেয়ের সংসার তার। সারাবছর মাছের ব্যবসা করে যে টাকা উপার্জন হয় তাতে আয়ের চেয়ে ব্যয়ের পরিমাণ বেশি হয়। অতিরিক্ত ব্যয় যোগান দিতে শীতের মৌসুমে রস বিক্রি করে পুষিয়ে নেয়। কালামের আলাপকালে আরো জানায় শুধু মাছের ব্যবসা করলে ছেলেমেয়েদের পড়াশুনা করাতে হিমশিম খেতাম। ঋণ হলেও খেজুরের রসের ব্যবসায় ঋণ পরিশোধ করতে ঠিক মতো ও স্বাচ্ছন্দে দিনাতিপাত করতে পারি। সন্তানরাও লেখাপড়া শিখে মানুষের মতো মানুষ হওয়ারও স্বপ্ন বুনছে বলে কালাম। শীতকালীন পিঠাপুলি, পায়েসসহ রকমারি খাবার তৈরিতে রস ও খেজুরগুড়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। খেজুরের রসের পায়েস, পিঠে, পুলি, ক্ষীর, সন্দেশ, ভাপা পিঠা, চিতই পিঠা, দুধ পিঠাসহ হরেক রকমের বাহারি পিঠা তৈরি করা হয়। আবার অনেকে গাছিদের কাছ থেকে টাটকা রস সংগ্রহ করে তা পান করে থাকেন। শহরের সাতমাথায় ভ্রাম্যমাণ ভাবে ভারে করে বিক্রি হচ্ছে খেজুরের রস, স্বাদ নিচ্ছে বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ। এক গ্লাস রস সর্বোচ্চ ২০ টাকায় বিক্রি হয়। শুধু রস বিক্রি করে অনেকটাই আর্থিক ভাবে লাভবান হচ্ছে গাছিরা। একজন গাছি খেজুরের রসের ভার সাজিয়ে রাস্তার পাশে বসে আছে। আর পথচারীরা সড়কে দাঁড়িয়ে গ্লাসে গ্লাসে রস পান করছেন। অনেকেই নিজে খেয়ে পরিবারের জন্যও নিয়ে যাচ্ছে। কুয়াশা ঢাকা শীতের সকালে টাটকা এক গ্লাস খেজুরের রসের তুলনা হয় না। এই মধুবৃক্ষ থেকে পাওয়া রস কাঁচা ও জ্বাল দিয়ে খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি এ রস দিয়ে তৈরি গুড় ও পাটালিরও তুলনা নেই। খনিজ ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ খেজুরের রসে প্রচুর এনার্জি বা শক্তি রয়েছে। কথা হয় গাছির রস খেতে দাঁড়িয়ে পড়া হালিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, শীতে খেজুরের রস কার না ভালো লাগে। শীত আসলেই রস খেতে মন চায়। ছোট বেলা থেকে খেজুরের রস খাওয়া আমার অভ্যাস। খেজুরের রসের স্বাদই আলাদা। যেটা অন্য কোন রসে নেই। তাই ২০ টাকা করে এক গ্লাস রস খেলাম। রস বিক্রেতা কালাম বলেন, আমি অনেক পরিষ্কার ও স্বাস্থ্যসম্মতভাবে রস বিক্রি করি। প্রতিদিন দুই থেকে আড়ায় হাজার টাকার রস বিক্রি হয়। মাঝে মাঝে তাঁর থেকে বেশি টাকাও বিক্রি হয়। তিনি বলেন, আমরা গাছিরা শীতের শুরুতেই খেজুর গাছের রস সংগ্রহ করতে শুরু করি। তবে আরো আগে থেকে প্রস্তুতি নিতে হয়। আর এ খেজুর বাগান মৌসুম ভিত্তিতে লিজ নিয়ে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করি। আবার সেইসব গুড় তৈরি করে বাজারে বিক্রি করি। ডা. বাতেন বলেন, খেজুর রস সুস্বাদু ও উপকারী পানীয়। তবে এ খেজুরের রসে রোগ জীবাণু থাকার আশঙ্কা রয়েছে । তাই কাঁচা খেজুর রস ফুটিয়ে খেলে রোগ জীবাণু ছড়ানোর আশংকা অনেকাংশেই কম থাকবে। তাই নিজের কথা চিন্তা করে সবাইকে খেজুরের রস ফুটিয়ে খাওয়া উচিত।
Leave a Reply