Press ESC to close

  • ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  • ১৫ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৪ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
  • রাত ৪:১১ | শনিবার | বসন্তকাল
PeopleEyes24.comPeopleEyes24.com

বগুড়ায় ফুটপাতে সবজি বেঁচে সংসার চলে জোছনার

পিপলআইস রিপোর্ট:

বগুড়া সদরের নারুলী তালপট্টি এলাকার জোছনা বেগম ২০ বছর ধরে রেললাইনের পাশে ভাগা করে সবজি বিক্রি করে। ৬ জন সদস্যের সংসারে অভাবে কেটে যায় দিন। দিন যায় মাস যায় তবুও অভাবটা শেষ হয় না। না ফুরানোর দায় নিয়েই চলছে জোছনা বেগমের সংসার। খুব সামান্যতেই খুশি জোছনা বেগম। মাত্র ৮০০ টাকার মূলধনে সারা দিনে ২০ টাকা করে প্রতি ভাগা সবজি বিক্রি করে ২০০ টাকা আয় করে চলে তার সংসার। তার সব কাঁচা সবজিই ২০ টাকায় ভাগা বিক্রি হয়। প্রচÐ অভাবের মধ্যেও নিজেকে টিকিয়ে রেখেছেন। 

বগুড়া শহরের নারুলী এলাকার আলেক উদ্দিন মÐলের স্ত্রী জোছনা বেগম। তার শুরুর জীবনটাও ছিলো অভাবের। নুন জোটে তো ভাত জোটে না। তার একমাত্র ছেলে মো. পেস্তা। সে এক সময় অটো চালিয়ে তিন বেলা খাবার খেলেও এখন সেটা হচ্ছে না। সড়ক দুর্ঘটনায় পঙ্গু পা নিয়ে ঘরে পড়ে আছে ছেলে পেস্তা। তাকেও টানতে হচ্ছে। উপায় না পেয়ে জোছনা বেগম বগুড়া শহরের রাজাবাজার থেকে পাইকারি সবজি কিনে নেন। তারপর সেগুলো ওজন করে ভাগা করেন। প্রতিটি ভাগা বিক্রি করেন ২০ টাকা করে। আলুর ভাগা, পটলের ভাগা, কাঁচা মরিচের ভাগা, বেগুনের ভাগা, শাকের ভাগা, কচুশাকের ভাগা, করলা, পেঁয়াজ, রসুন, মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন সবজির ভাগা বিক্রি করেন ২০ টাকা। তার এই ভাগার বাজারে অসংখ্য ক্রেতা আছে। দিনমজুর, ফেরিওয়ালা, ভিক্ষুকসহ অভাবী মানুষগুলোই তার বড় ক্রেতা। এই ক্রেতারা বাজার থেকে ৩ কেজি ওজনের মিষ্টি কুমড়া কিনতে পারে না। এই ক্রেতারা বাজার থেকে হাফ বা এক কেজি করে কাঁচা সবজি কিনতে পারে না। কারণ যা আয় করে তা দিয়ে হাফ কেজি করে তিনটি সবজি কিনতে গেলেই তারা পণ্য কিনতে হিমশিম খায়। কিন্তু ২০ টাকা করে তিনটি বা চারটি সবজি কেনা সহজ। কোনোমতে এক বা দুবেলা কেটে গেলেই হয়। অভাবী মানুষের এই সংসার এভাবেই চলছে। আর জোছনার ৮০০ টাকার মূলধন ব্যবসাও সে ভাবেই চলছে।

জোছনার প্রতিবেশীরা জানান, সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত টানা রোদের মধ্যে পুড়ে সে সবজি ভাগার ব্যবসা করে। খুব কষ্ট করে তাদের সংসার চলে। অন্যের কাছ থেকে চেয়ে খাওয়ার চেয়ে নিজে কিছু করে খাওয়ার মর্যাদাই আলাদা। আবার অনেক ক্রেতা আছে যারা ব্যাগ ভরে বাজার করতে পারে না। দেখা গেলো ৩টা বা ৪টা সবজি কিনতে গেলে ১০০ টাকার বেশি খরচ হয়। সেখানে জোছনার ভাগা কিনলে ৫০ টাকার মধ্যে হয়ে যাচ্ছে। বাকি টাকায় চাল কিনে দুবেলা সে পেট পুরে খেয়ে বেঁচে থাকছে। সে আয় থেকে চাল আর সবজি কিনে বাড়ি ফিরে ছেলেকে নিয়ে দুবেলা খেয়ে থাকেন। তিনি বলেন, ৫ টাকা ভাগা দিয়ে শুরু করেছিলাম সবজির ভাগার দোকান। এখন দিনে দিনে সবজির দাম বেড়ে যাচ্ছে। এখন প্রতি ভাগা বিক্রি করতে হয় ২০ টাকা। আগের মতো লাভও কমে গেছে। তারপরও ছেলেকে নিয়ে বেঁচে থাকতে সে লড়াই করে যাচ্ছেন। এই ভাগা সবজির ক্রেতা আছে। যারা স্বল্প টাকায় দিন চালায় তারাই তার বড় ক্রেতা। বাজারে ১০০ গ্রাম আলু, বেগুন দেবে না। দিলেও তার খরচ বেশি হবে। কিন্তু তাকে তো কম খরচে সংসার চালাতে হবে। সে কারণে সে ২০ টাকার ভাগা সবজি কিনে থাকে। নিজের ইচ্ছা করে ভালো কিছু খেতে, ভালো কিছু পরতে। কিন্তু অভাবের সংসারে সেসব হয়ে ওঠে না। অভাব আছে তাই অভাবের মধ্যেই দিনাতিপাত করছেন তিনি।

বগুড়া শহরের রাজাবাজার এলাকার বাজার করতে আসা লোকমান হোসেন জানান, জোছনা বেগম শহরের রেললাইনের একপাশে বসে ভাগা করে সবজি বিক্রি করেন। এই সবজি সে ২০ বছর যাবত বিক্রি করে আসছেন। যারা বাজার থেকে ১০০ টাকার বাজার করতে পারে না। তারা জোছনার দোকান থেকে ৫০ টাকার ৫ ভাগা সবজি কিনে বাড়ি ফেরে। এখন বাজারে সব পণ্যের দাম বেশি। যখন দাম কম ছিলো তখন জোছনা বেগম কম দামেই বিক্রি করেছেন। একসময় ৫ টাকা ও ১০ টাকা ভাগা বিক্রি করতেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *