
পিপলআইস রিপোর্ট:
অপ্রতুলতা ও পৃষ্ঠপোষকতার অভাব এবং পরিকল্পিত উদ্যোগের অভাবে বিলুপ্ত হতে চলেছে বাঁশ শিল্প। বাঁশ শিল্প বাঙালি সংস্কৃতির একটি বড় অংশ। বাঁশ দিয়ে ঘরের কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন জিনিসপত্র তৈরি করা হতো। আর এসব জিনিসপত্রের কদরও ছিল ভালো। বর্তমান বাজারে প্লাস্টিক পণ্য সামগ্রীর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকে থাকতে না পেরে মুখ থুবড়ে পড়েছে এককালের ঐতিহ্যবাহী এই শিল্প। বগুড়ার বিভিন্ন হাটে বাঁশ শিল্প বিক্রেতা অতুল বসাক, পলাশ চন্দ্র, আব্দুল আজিজ, আইয়ুব আলী, সজিব মিয়া ও আব্দুল মজিদ এর সাথে কথা হলে তারা জানায়, দীর্ঘদিন ধরে তারা এ কাজে নিয়োজিত রয়েছে। অতি কষ্টে বাঁশ শিল্প টিকে রাখতে ধার দেনা ও বিভিন্ন সমিতি থেকে বেশি লাভ দিয়ে টাকা নিয়ে কোন রকম বাপ দাদার পেশা আঁকড়ে ধরে জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। পেশা ছাড়তেও বেশ কষ্ট পাচ্ছে তারা। আমাদের মতো পরবর্তী প্রজন্মরা কষ্ট যেন না পায় সেনিমিত্তে তাদেরকে সুশিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাই। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শিক্ষার আলো পেলে অন্য পেশায় গমন করা সহজতর হবে।
উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য না পাওয়ায় অভাব-অনটনের মধ্যে দিনযাপন করছেন বাঁশ শিল্পের সাথে সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলো। পরিবার পরিজন নিয়ে বেঁচে থাকতে তারা এ পেশাকে ছেড়ে অন্য পেশায় ঝুঁকছেন। ঐতিহ্যবাহী শিল্পকর্মটি দেশ থেকে বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। একসময় ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বগুড়ার গ্রামীণ পল্লীতে বাঁশের চটা দিয়ে চাটাই, কুলা, ডালা, চাঙারি, টুকরি, ওড়া, চালুনি, মাছ রাখার খালই, ঝুঁড়ি ও হাঁস-মুরগির খাঁচাসহ বিভিন্ন জিনিস তৈরি করা হতো। পুরুষের পাশাপাশি নারীরাও এ কাজে সামিল হতো। আর হাটবারে স্থানীয় বাজারে এমনকি বাড়ি বাড়ি ফেরি করে এসব বাঁশ-বেতের পণ্য বিক্রি হতো। কিন্তু সময়ের ব্যবধানে এ শিল্পের মূল উপকরণ বাঁশের মূল্য বৃদ্ধিতে বাঁশ-বেতের কারিগররা তাদের পেশা ধরে রাখতে হিমশিম খাচ্ছে। ফলে বেকার হয়ে পড়েছে গ্রামীণ কারিগররা। অনেকেই আবার এ পেশা ছেড়ে চলে যাচ্ছে অন্য পেশায়। বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ঘরে ঘরে ছিল বাঁশের তৈরী সামগ্রীর কদর। তাদের পূর্ব-পুরুষের এ পেশা আঁকড়ে ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করেও হিমছিম খাচ্ছে। কালের বিবর্তনের সাথে সাথে বাঁশের তৈরি জিনিসপত্র আর তেমন চোখে পড়ে না। অপ্রতুল ব্যবহার আর বাঁশের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারনে বাঁশ শিল্প আজ হুমকির মুখে। যে বাঁশ ৮০ থেকে ১০০ টাকায় পাওয়া যেত সেই বাঁশ বর্তমান বাজারে কিনতে হচ্ছে আড়াইশ থেকে তিন শত টাকায়। বাড়েনি এসব পণ্যের দাম। এ শিল্পকে ধরে পারলে পরিবেশ দূষণ অনেক কম হতো। প্লাস্টিকের ব্যবহারের কারণে মানব জীবনের ঝুঁকি বাড়ছে। প্লাস্টিক ব্যবহার বন্ধ করে এ শিল্পকে এগিয়ে নেয়া যুগোপযোগি ও পরিবেশ বান্ধব। জনসংখ্যা বৃদ্ধিসহ ঘরবাড়ী নির্মাণে যে পরিমান বাঁশের প্রয়োজন সে পরিমান বাঁশের ঝাড় বৃদ্ধি পাচ্ছে না। প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও এ শিল্পকে রক্ষায় বাঁশের ঝাড় বাড়ানো অতিব প্রয়োজন।
Leave a Reply