Press ESC to close

  • ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  • ১৫ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৪ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
  • রাত ১২:২৮ | শনিবার | বসন্তকাল
PeopleEyes24.comPeopleEyes24.com

বগুড়া ওয়াইএমসিএ’র ইতিহাস

পিপলআইস রিপোর্ট: বগুড়া শহরে ওয়াইএমসিএ’র পরিচয় ঘটে ১৯৭৮ খ্রিষ্টাব্দে। সে সময় বগুড়া শহরে দুইটি ওয়াইএমসিএ প্রতিষ্ঠিত হয়। প্রথম দলটি স্থানীয় যুবকদের অবজ্ঞা অবহেলা করে ওয়াইএমসিএ শুরু করার ফলে বিরোধ সৃষ্টি হয়। ফলে উদ্যমী যুবকরা আরেকটি ওয়াইএমসিএ প্রতিষ্ঠা করে। দুই দলকে এক করার জন্যে তৎকালীন জাতীয় সাধারণ সম্পাদক প্রয়াত ম্যাথিউ মালাকার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। প্রয়াত ম্যাথিউ মালাকারের দূরদর্শিতা ও সহযোগিতায় ৩১ মার্চ ১৯৭৯ খ্রি. বগুড়া ওয়াইএমসিএ’র উপর বিশেষ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। সেই কর্মশালায় দুই দলই ইতিবাচক সাড়া দেন এবং এক হয়ে স্বচ্ছ নির্বাচন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট একটা স্টিয়ারিং কমিটি গঠন করেন। তৎকালীন স্টিয়ারিং কমিটির সদস্যরা ছিলেন, সভাপতি শৈলেন্দ্রনাথ বাড়ৈ, সম্পাদক হ্যারল্ড বিশ্বাস, কোষাধ্যক্ষ ডাঃ প্যাট্রিক বিপুল বিশ্বাস, সদস্য রবার্ট রবিন মারান্ডী, সদস্য অমল প্রামানিক। কর্মশালার পর দুই দলই সকল ভেদাভেদ ভুলে স্টিয়ারিং কমিটির নেতৃত্বে বগুড়া ওয়াইএমসিএ এক যোগে কাজ শুরু করেন। তাই বলা যায় ওয়াইএমসিএ সকল সাংগঠনিক রূপরেখা নিয়ে প্রথম ১৬ জন পূর্ণ সদস্য নিয়ে ১৯৭৯ খ্রিষ্টাব্দে শুরু হয় বগুড়া ওয়াইএমসিএ’র আনুষ্ঠানিক পথ চলা। তবে ১৯৮৪ খ্রিষ্টাব্দে বগুড়া ওয়াইএমসিএ বাংলাদেশ ওয়াইএমসিএ জাতীয় পরিষদের সদস্য পদ লাভ করে এবং সমাজকল্যাণ অধিদপ্তরে নিবন্ধিত হয়। বগুড়া ওয়াইএমসিএ চার দশক পেরিয়েছে। বগুড়া ওয়াইএমসিএ’র শুরুটা একেবারে শূন্য থেকে। শুরুর দিকে ওয়াইএমসিএ’র কোন ঘর/সেন্টার বা অফিস ছিল না। বগুড়া মিশনের ভিতরে গাছের তলায়, কখনো স্কুলের বারান্দায়, কারো কারো বাসায় কমিটির সভা হত। পরবর্তীতে একজন বিদেশী মিশনারী ওয়াইএমসিএ’র ভালো কর্ম প্রয়াস দেখে ঘর ভাড়া নেওয়ার জন্যে এককালীন ৪০০০ টাকা দান করেন। ঐ অনুদান দুই রুমের একটি ছোট্ট ঘর ভাড়া নিয়ে প্রথম বগুড়া ওয়াইএমসিএ’র কার্যালয় স্থাপিত হয়। পরবর্তীতে বগুড়া ওয়াইএমসিএ বাংলাদেশ ওয়াইএমসিএ’র জাতীয় পরিষদের আর্থিক সহযোগিতায় নানামুখী সমাজ উন্নয়নমূলক কাজ শুরু করেন। ১৯৮৯ খ্রিষ্টাব্দে বাংলাদেশ ওয়াইএমসিএ জাতীয় পরিষদের আর্থিক সহায়তায় বগুড়ায় একটি ভোকেশনাল ইন্সটিটিউট স্থাপিত হয়। একই সাথে ওয়াইএমসিএ স্বাবলম্বীতার জন্য তিন তলা বিশিষ্ট .৮৪ শতাংশ জায়গায় বগুড়া ওয়াইএমসিএ নিজস্ব ভবন প্রতিষ্ঠিত হয়। বগুড়া ওয়াইএমসিএ তাদের তালন্ত ব্যবহার করে স্থানীয় সম্পদকে ব্যবহার করে তাদের ওয়াইএমসিএকে করেছে পত্র-পল্লবে বিকশিত। তাই বলা যায় স্থানীয় স্বাবলম্বীতায় বগুড়া বগুড়া ওয়াইএমসিএ একটি সফল প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে বগুড়া ওয়াইএমসিএ’র মোট সদস্য সংখ্যা প্রায় ৯৪ জন। পূর্ণ সদস্য ৫৮ জন্য এবং সহযোগী সদস্য সংখ্যা মাত্র ৩৬ জন। আর বগুড়ায় স্থানীয় ক্রিস্টানদের সংখ্যাও হাতে গোনা কয়েকজন। তবে আশাপ্রদ দিক হ’ল বগুড়া ওয়াইএমসিএ জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের মাঝে আলো ও লবণ হয়ে কাজ করছে। আন্তঃধর্মীয় স¤প্রীতি ও সম্পর্ক বগুড়া ওয়াইএমসিএ’র জন্য বড় একটি শক্তি। যেখানে ভেদাভেদহীনভাবে সমাজ উন্নয়নে সবাই এক সঙ্গে কাজ করছে। বগুড়া ওয়াইএমসিএ নিজেদের অর্থায়নে বর্তমানে নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। সদস্য ভিত্তিক কার্যক্রমে রয়েছে সদস্য উন্নয়ন কর্মশালা, ইয়ূথ ফোরামের কার্যক্রম, বিশ্ব ওয়াইএমসিএ- ওয়াইডাবিøউসিএ প্রার্থনা সপ্তাহ উদযাপন, বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, প্রাক-বড়দিন অনুষ্ঠান, বার্ষিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপন, ইস্টার পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান, বাংলা নববর্ষ উদযাপন এবং প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী আয়োজন। আয়মূলক কার্যক্রমের অন্যতম দিক হল-বগুড়া ওয়াইএমসিএ পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ। বগুড়া শহরে এই স্কুলের ব্যাপক সুনাম রয়েছে। স্কুলের পাশেই রয়েছে বগুড়া ওয়াইএমসিএ গেস্ট হাউজ ও ক্যাফেটোরিয়া। গেস্ট হাউজে ১৫টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষ আধুনিকভাবে সাজানো হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্যে রয়েছে আধুনিক অডিটোরিয়াম। বগুড়া ওয়াইএমসিএ কম্পিউটার শট কোর্সের মাধ্যমে যুব সমাজের মাঝে কারিগরি শিক্ষার প্রসার ঘটাতে ২০০৭ খ্রিস্টাব্দে ইনফরমেশন এন্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি ডেভেলপমেন্ট সেন্টার (আইসিটিডিসি) চালু করেন। ইতোমধ্যে এই সেন্টারটি বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের নিবন্ধন লাভ করেছে এবং বর্তমান ছাত্রছাত্রীরো ডিপ্লোমা কোর্সে নিয়মিত ভর্তি হচ্ছে এবং ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা বাড়ছে। বগুড়া ওয়াইএমসিএ আয়মূলক কার্যক্রমের বদৌলতে সমাজ উন্নয়ন ও এডভোকেসীতে বিভিন্ন অগ্রগামী সুশীল সমাজের সঙ্গে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এ্যাম্পায়ারিং দ্যা পাওয়ারলেস এন্ড কমিউনিটি অর্গানাইজিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে বগুড়া ওয়াইএমসিএ তৃণমূল এবং পিছিয়ে পড়া মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করছে। বিশেষভাবে নদীর পাড়ের মানুষের সঙ্গে একাত্ব হয়ে তাদের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করছে। বিগত সময়ে মহিলাদের অর্থনৈতিক মুক্তির লক্ষ্যে ও তাদের স্বাবলম্বী করার জন্যে বগুড়া ওয়াইএমসিএ হস্তশিল্প প্রশিক্ষণ পরিচালনা করেছে। বগুড়া ওয়াইএমসিএ পিছিয়ে পড়া প্রতিবন্ধীদের নিয়েও বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ইপকপ প্রকল্পের মাধ্যমে নারী-পুরুষ ক্ষমতায়ন, সমতা আনয়ন ও লিঙ্গ-বৈষম্য দূরীকরণে এডভোকেসী প্রোগ্রামের আওতায় জন্ম-নিবন্ধন, নারী-নির্যাতন, দূর্নীতি, বাল্য বিবাহ এবং যৌতুক বিরোধী সবেতনতামূলক কর্মসূচি নিয়মিতভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এ দরনের র‌্যালি মানুষের ভিতরে সচেতনতা জাগাতে বগুড়ায় ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। চারদশকে বগুড়া ওয়াইএমসিএ’র অর্জন প্রশংসনীয়। কার্যক্রম এবং কাঠামোগত উন্নয়নে বগুড়া ওয়াইএমসিএ এখন অন্যান্য ওয়াইএমসিএ’র কাছে একটি অনুকরণীয় আদর্শ। বগুড়া ওয়াইএমসিএ তাদের কাজের মাধ্যমে সরকারী-বেসরকারী সংস্থাসমূহের কাছে স্থানীয়ভাবে সু-নজর ও সমাদর অর্জন করেছে। তাই সরকারী-বেসরকারী পর্যায় সুসম্পর্কের মাধ্যমে গতিশীল স্পৃহা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে বগুড়া ওয়াইএমসিএ। অনেকের অবদানে, সহযোগিতায় গড়ে উঠেছে আজকের এই বগুড়া ওয়াইএমসিএ। বগুড়া ওয়াইএমসিএ’র বোর্ড সদস্য ও অন্যান্য সদস্যরাই কার্যক্রমের চালিকা শক্তি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *