Press ESC to close

  • ১লা চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
  • ১৫ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
  • ১৪ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি
  • ভোর ৫:০৯ | শনিবার | বসন্তকাল
PeopleEyes24.comPeopleEyes24.com

বগুড়ার নারীরা কুমড়ো বড়ি তৈরি করে সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছে

পিপলআইস রিপোর্ট:

শীতের খাবারে ভিন্ন স্বাদ আনতে সবজিতে কুমড়া বড়ির প্রচলন দীর্ঘদিনের। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী শীতের পিঠাপুলি খাবারের মত কুমড়া বড়িরও বেশ কদর রয়েছে। একসময় কেবল স্থানীয় খাদ্যপণ্য হিসেবে কুমড়ো বড়ির ব্যবহার থাকলেও কয়েক বছর ধরে রপ্তানি হচ্ছে বিভিন্ন দেশে। শীত মৌসুমে চাহিদা বেশি। তাই ব্যস্ততা বেড়েছে প্রস্তুতকারকদের। কার্তিক থেকে ফাল্গুন মাস পর্যন্ত চলে এ ব্যবসা। চালকুমড়া আর ঠিকরি কলাইয়ের ডাল মিশিয়ে তৈরি হয় গ্রামবাংলার জনপ্রিয় এই খাবারটি। ডালের দাম বাড়ায় বড়ির দামও বেশি। এককেজি ৩৫০ টাকা করে কিনতে হয়। বড়িগুলো উন্নতমানের তাই মানুষ এগুলো খায়। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে শীতকালীন সুস্বাদু এই খাবার উপকরণটি যাচ্ছে বিদেশেও। এক সময় গেরস্ত নিজেদের খাবারের জন্য এ কুমড়ো বড়ি তৈরি করতো। গেরস্তের বাড়ির আঙিনা ছেড়ে এখন তা বাণিজ্যিক পণ্যে রূপ নিয়েছে। কুমড়ো বড়ি বদলে দিয়েছে গ্রামীন অর্থনীতি। শীতকালের ভিন্ন পদের খাবার হিসেবে দেশে রয়েছে এর প্রচুর চাহিদা। আর এই চাহিদা পূরণে কাজ করে যাচ্ছে বগুড়ার প্রায় ১০ থেকে ১২ হাজার নারী। জেলার গ্রামীণ নারীরা মৌসুমি খাদ্য হিসেবে ও সংসারের বাড়তি আয় বাড়াতে কুমড়ো বড়ি তৈরি করে নিজেদের পরিবারের অর্থের যোগান বৃদ্ধি করছেন। 

জানা যায়, বগুড়া জেলার আদমদিঘী, দুপচাঁচিয়া, সারিয়াকান্দি, ধুনট, শেরপুর, নন্দীগ্রাম উপজেলায় কুমড়ো বড়ি তৈরী ও বিক্রি শুরু হয়েছে আদিকাল থেকে। সাংসারিক কাজের ফাঁকে গৃহবধূরাই প্রধান কারিগর। কুমড়ো বড়ি তৈরী ও বিক্রি করে অনেকেই সংসারের বাড়তি আয় করে থাকেন। মাশকালাই ও খেসারি ডাল থেকে তৈরি করা এই সুস্বাদু খাবার শুধু শীতের সময়ই তৈরি এবং বিক্রি হয়ে থাকে। কুমড়ো বড়ি পল্লী নামে খ্যাত বগুড়ার দুপচাঁচিয়া উপজেলার সাবলা ও কালিবাড়ি গ্রাম। নিজেদের ভাগ্য উন্নয়ন ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে এই পল্লীটি। এখানকার বেশির ভাগ নারীরা এখন বাণিজ্যিকভাবে তৈরি করছেন কুমড়ো বড়ি। দুই গ্রামের প্রায় ১০০ থেকে ১২০টি পরিবার এই পেশার সাথে জড়িত। বর্তমানে এই গ্রামের অনেকেই সাবলম্বি হয়ে উঠেছেন এ ব্যবসা করে। কুমড়ো বড়ির কারিগররা জানান, মাষকলাইয়ের ডাল দিয়ে গ্রামীণ নারীদের হাতে তৈরি সুস্বাদু কুমড়ো বড়ি বগুড়ার চাহিদা মিটিয়ে এখন বিদেশেও বিক্রি করা হচ্ছে। চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় পাইকাররা প্রতিদিন কিনে নিয়ে যাচ্ছেন এই পল্লীর কুমড়ো বড়ি। কুমড়ো বড়ি তৈরির উপযুক্ত সময় হলো শীতকাল। এজন্য শীত আসার সঙ্গে সঙ্গে কুমড়ো বড়ি তৈরির ব্যস্ততাও বেড়ে যায় এই পল্লীতে। গ্রামের রাম কৃষ্ণ মোহন্ত জানান, ৫০ কেজি মাশকালাই থেকে ৩৫ থেকে ৪০ কেজি কেজি পরিমান কুমড়ো বড়ি তৈরি করা যায়। এগুলো তৈরি করতে শ্রমিকসহ ৪ থেকে ৫দিন সময় লেগে যায়। তিনি প্রতিদিন ২০ কেজি পরিমান কুমড়ো বড়ি বিক্রি করে থাকেন। তিনি আরও জানান, সাবলা ও কালিবাড়ি গ্রাম থেকে প্রতিদিন প্রায় ১ থেকে দেড় লাখ টাকার কুমড়ো বড়ি বিক্রি হয়ে থাকে। বগুড়াসহ উত্তরা লের গাইবান্ধা, রংপুর, দিনাজপুর, কুড়িগ্রাম, সিরাজগঞ্জ, নওগাঁ জেলার পাইকাররা এখান থেকে পছন্দমত কুমড়ো বড়ি নিয়ে যান। 

সাবলা গ্রামের দেবদাস মোহন্ত জানান, শত বছরের ঐতিহ্য ধরে রাখতে আমরা কুমড়ো বড়ি তৈরি করি। এটা আমাদের বাপ-দাদার পেশা। বাপ-দাদার আমলে সবকিছুর দাম কম ছিল। এখন মাশকালাইসহ চাল, ডালের দাম কয়েকগুন বেড়ে গেছে। 

কুমড়ো বড়ি তৈরি করে বর্তমানে এই গ্রামের অধিকাংশ পরিবারের জীবনমান পাল্টে গেছে। এ ব্যবসার সাথে নিয়োজিত থেকে অনেকেই কাঁচা বাড়ি থেকে বিল্ডিং করেছেন। পরিবর্তন হয়েছে তাদের ভাগ্যের।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *